https://dupurmitra.wordpress.com/2013/09/10/%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%8f%e0%a6%95-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95/
ভূমিকার পরিবর্তে
ইংরেজিতে ওয়ান লাইনার বলে একটা প্রকরণ আছে। বেস্ট ওয়ান লাইনার পুরস্কারও দেওয়া হয়। বাংলাভাষায় এই প্রকরণকে ঘিরেই এক লাইনের কবিতা কেমন হতে পারে তার কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি। এখানে সবগুলো এক লাইনের কবিতা তুলে ধরা হল।
দরজা খুললেই ঘরে ঢুকে পড়ে অন্ধকার।
শহর জুড়ে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইড, যেখানে পুড়ে মানুষ কালো হয়।
কোনো কোনো যাত্রী জানে কিছু কিছু ট্রেনের নেই কোনো গন্তব্যস্থল।
শ্যাওলারাই জানে, কোন রঙে জাগবে পুকুর।
ধান সেদ্ধ করার সময় সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায় বউদের শরীরের ঘ্রাণ।
বাতাসে উড়তে থাকলে একদিন আমাকে কেউ চিনবে না, আমার নাম হয়ে যাবে বাতাস।
তুমি যখন ঘুমিয়ে থাক, তোমার পাশে জেগে থাকে রাত।
ঘাসের ওপর পা ফেললে ঘাস নুয়ে পড়ে পথ করে দেয়।
কানটুপি রুখতে পারে না তারে, কানে ঢুকে যায় শীতের বাতাস।
আকাশের মেঘ-খোঁপা যত বড় হয়, আমাদের শহরে নামে তত অন্ধকার।
নদীর বুকের ওপর ওড়ে মাছরাঙা; আরেকবার,আরেকবার নদীর বুকে ডুব দেবার আশায়।
শহরে যেদিন সার্কাস দল এল, সেদিন থেকে পুরো শহরটিই হয়ে ওঠল সার্কাস।
জংলি ফুলের মত কখন কার চোখ লাল হয়ে ঝড়ে যায়, কেউ জানে না।
এবার আর ভিজব না, বৃষ্টি এলে ভেসে যাব ঠিক নদীতে।
তোমার পায়ের পাতার দিকে তাকালেই টের পাই, এ এক বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ।
যে নিপুণ দক্ষতায় ভেজা চুল ঝেড়ে ফেলে দাও জল, সেভাবে ভেজা চোখ থেকে ঝেড়ে ফেল দেখি জল ?
শামুক কুড়োতে কুড়োতে একদিন পেয়ে যাব ঠিক শামুকে কাটা আমারই পায়ের আঙুল।
কখনো-সখনো মানুষ থাকে না আর, আমার চারপাশে চুপচাপ বসে থাকে পাখ-পাখালি, গাছ-পালা, সবুজ মাঠ আর স্মৃতি।
পুকুরের পাড়ে এসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয় মাছ, হয়তবা ভাবে এই নয় তার শেষ সীমানা।
একা একা স্নান করতে করতে ডুবে গিয়েছে এই নদী।
ধূলোর ঘোড়া এসে দাঁড়িয়ে আছে, কার ঘরে যাব আমি?
জানি তুমি স্থির নও, ঝড়ের আগে জানি সাদা হাঁস ওড়ে।
কথা দাও কোনোদিন দেবে না ফেলে, আংটি নয়-তোমাকে দিয়ে গেলাম স্বর্ণালি চাঁদ।
করাতকলের মত শব্দ করে রোদ ওঠে, তারপর দেখি তুমি নেই।
ইনসমোনিয়া নয়, পুঁটি মাছের মত ডাঙায় আনা হলেই দ্রুত মারা যাই আমি।
এ শরীর পরিস্কার হবার নয়, ব্যাঙের মত তাই লাফিয়ে ওঠে সাবান।
ভাত খেলাম,ঘুমুলাম, হাঁটলাম, বাজারে গেলাম- সারাদিন একটি অ্যাকুরিয়ামে ছিলাম।
নাচের স্কুলে কে এত নাচে, আজ তো কেউ আসেনি।
আমার মতই একা শুয়ে থাকে ইলেকট্রিক গিটার আর গেয়ে ওঠে গান।
সকাল হলে কসাইখানায় ফুটে থাকে শত শত রক্তজবা ফুল।
চমকে কি উঠি এই জেনে যে হলুদবাটার সাথে সম্পর্ক নেই কোনো ব্যক্তিগত বসন্তের?
কিছু কিছু ফুলকে বিষ সাথে নিয়ে ফুটতে হয়।
বৃষ্টি জানে না, কখনো কখনো তার আঘাতে সবুজ পাতা থেকে বৃষ্টির সাথে ঝড়ে পড়ে সবুজ রক্ত।
বোতাম খোলার পর এত এত রোদ, কে এমন করে হেসে ওঠল।
রাতে ভুলভাবে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সকালে হেসে ওঠে ব্যথা।
নদী নয় বাতাস জানে, কোন নৌকা কোথায় যাবে আর কোথায় নিয়ে যেতে হবে কোন নৌকাকে।
রাত মুছে গেলে বিছানায় পড়ে থাকি শুধু আমি।
চেয়ারে পা ছড়িয়ে বসে তোমাকে তো ভালবাসা হল না সময়।
ধানের ক্ষেত ধরে এক গ্রাম থেকে চলে যাওয়া যায় অন্য গ্রামে।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় যে মেয়ে শরীর ছড়িয়ে দিয়ে বসে, সে শরীর শুধু আয়নাকে দেয় না; সে শরীর দিতে চায় বা আয়নার বদলে মেলে দেয় কাউকে যে তাকে ভালবাসে।
এমনিই নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে, যেভাবে এমনি নেমে পড়ে বৃষ্টি; তারপর গড়িয়ে যায় এ শহর থেকে ও শহর।
সিগারেট পুড়তে পুড়তে ঠোঁটও পুড়ে গেছে, ক্রমশ কালো হয়ে গেছে হৃদয়।
পাপোশে পা ঘষে ফেলা দেওয়া যায় কি ঘরের বাইরের জীবন?
তুমি হাঁট এতটা ছন্দময়, ল্যাম্পপোস্টের আলোতে কোনোদিন ধরা পড়ল না অস্থিরতা তোমার।
রাতে এত এত গভীর আর সূক্ষ্ম মাকড়সার জালের ভেতর ঢুকে পড়ি যে আমার আর মশারি লাগে না।
ভয়ে নেমে পড়ি, কোথায় যে নিয়ে যাবে এই গাড়ি।
লাটিম যখন প্রচণ্ড ঘুরতে থাকে, তখন তাকে নিশ্চুপ, স্তিমিত মনে হয়।
আর চিঠি আসবে না, শুধু ইমেল আসবে; বুঝতে পারবে না এটা কার লেখা।
এত এত বার জামা ধোয়া হল, শুকাতে দেয়া হল রোদে; তারপরও দেখ আমার শরীরের গন্ধ লেগে আছে তোমার জামায়।
তারকাদের জীবনে সংসার নেই, আছে কেবল টিম টিম করে নিজের মত জ্বলা।